ঢাকা, বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ পৌষ ১৪৩২

প্রচ্ছদ » দেশের খবর » বিস্তারিত

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে দিনাজপুরে শোকের ছায়া

২০২৫ ডিসেম্বর ৩০ ১৮:৫৭:১৫
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে দিনাজপুরে শোকের ছায়া

শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : দিনাজপুরের মেয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে দিনাজপুরে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। বিশেষ করে বিএনপির চেয়ারপারসনকে হারিয়ে শোকাহত দলীয় নেতাকর্মীরা। সাধারণ মানুষের মাঝেও ছড়িয়ে পড়েছে শোক।

বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন উপজেলা-ইউনিয়ন থেকে নেতাকর্মীরা শহরের গনেশতলা বিএনপির জেলা দলীয় কার্যালয় এবং শহরের বালুবাড়ীস্থ খালেদা জিয়ার পৈত্রিক বাড়িতে আসতে শুরু করেন। প্রিয় নেত্রীর বিদায়ে ছিলো তাদের চোখ অশ্রুসিক্ত।

দিনাজপুর জেলা বিএনপির সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন দুলাল জানান, আমাদের দিনাজপুরের মেয়ে বিএরপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ছাড়া আমরা কিছুই বুঝি না। তাকে দিনাজপুর- ৩ (সদর) আসনে প্রার্থী ঘোষণার পর মাত্র কয়েকদিন আগেই আমরা কয়েকজন জেলার নেতা তার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়েছিলাম। তার শিশুসুলভ অমায়িক আচরণ আমাদের মোহিত করেছিল। আমরা দিনাজপুরের মানুষ প্রথম বারের মতো তাকে প্রার্থী হিসেবে পেয়ে নির্বাচিত করার জন্য মুখিয়ে ছিলাম। ছুটে চলেছিলাম, প্রত্যন্ত অঞ্চলে তাকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করার জন্য। কিন্তু আমদের স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল। জাতির এই বড় ক্লান্তিলগ্নে তার খুবই প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এই প্রয়োজনের সময়ে তাকে হারালাম। তবে এই দেশ ও জাতি যতদিন থাকবে, ততদিন মানুষ তাকে মনে রাখবেন। তিনি দেশনেত্রী হয়েই থাকবেন।

দিনাজপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বখতিয়ার আহম্মেদ কচি জানান, গৃহবধূ থেকে রাজনীতিতে এসে দিনাজপুরের মেয়ে বেগম খালেদা জিয়া জিয়া শুধু দেশে নয়, বহির্বিশ্বেও স্থান করে নিয়েছেন। দেশে যখনই কোনো সংকট তৈরি হয়েছে তখনই তিনি দেশের নেতৃত্ব দিয়েছেন, মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এটা আমাদের জন্য অনেক অহংকার এবং গৌরবের। আমরা তাকে সম্মান করেছি। এমন নেতা আর জন্মাবে না। রাজনীতির অঙ্গনে আমরা আজ একজন অভিভাবক হারালাম।

যেভাবে বেড়ে ওঠেন বেগম খালেদা জিয়া

ইস্কান্দর মজুমদার ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। ব্যবসার সুবাদে পরিবার নিয়ে দিনাজপুরে আসেন। প্রথমে দিনাজপুর শহরের মুদিপাড়ায় একটি বাড়িতে বসবাস শুরু করেন তিনি। খালেদার মায়ের নাম বেগম তৈয়বা মজুমদা। বেগম খালেদা জিয়ার জন্ম নাম খালেদা খানম পুতুল। ১৫ আগস্ট ১৯৪৬ সালে দিনাজপুরে জন্মগ্রহণ তিনি। তিন বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে তৃতীয়। পরে তারা শহরের বালুবাড়ী শহীদ মিনার মোড়ে তৈয়বা ভিলায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। বাড়িটি বর্তমানে একটি বেসরকারি হাসপাতাল এন্ড ক্লিনিককে ভাড়া দেওয়া রয়েছে বাবা, মা ও বড় বোনের কবর রয়েছে দিনাজপুর শহরের উপকন্ঠ ফরিদপুর গোরস্থানে।

বেগম খালেদা পাঁচ বছর বয়সে দিনাজপুরের মিশন স্কুলে ভর্তি হন এরপর তিনি দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে থেকে ১৯৬০ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। একই বছর জিয়াউর রহমানের সঙ্গে বিয়ে হয়। এরপর থেকে তিনি খালেদা জিয়া বা বেগম খালেদা জিয়া নামে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি স্বামীর সঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তানে বসবাসের পূর্বে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত দিনাজপুরের সুরেন্দ্রনাথ কলেজে (বর্তমানে দিনাজপুর সরকারি কলেজ) পড়াশোনা করেন।

প্রথম প্রার্থী দিনাজপুরে

দিনাজপুর শহরে খালেদা জিয়ার জন্ম ও শৈশবের বেড়ে ওঠা হলেও রাজনৈতিক জীবনে তিনি কখনো দিনাজপুরের কোন আসনে প্রার্থী ছিলেন না। সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত দিনাজপুর- ৩ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তার বড় বোন খুরশীদ জাহান হক চকলেট।

এই প্রথম তিনি নিজের জন্মস্থানে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে দিনাজপুর- ৩ (সদর) আসন থেকে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর মনোনয়নপত্র গত ২৮ ডিসেম্বর জমা দিয়েছিলেন জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ। তাকে নির্বাচিত করার জন্য অধীর আগ্রহে থাকা দিনাজপুর বাসীর স্বপ্ন শুধুই স্বপ্ন রয়ে গেল। তাকে পেলোনা আর জনপ্রতিনিধি হিসেবে।

(এসএস/এসপি/ডিসেম্বর ৩০, ২০২৫)