প্রচ্ছদ » দেশের খবর » বিস্তারিত
তাড়াশে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই, ৮ বছরে মুক্তিযোদ্ধা!
২০১৭ এপ্রিল ১৭ ১৯:৩৭:০২
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয় যখন সারাদেশে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা চিহ্নিত করতে সোচ্চার ঠিক তখনই তাড়াশ উপজেলার ভায়াট গ্রামের ১৯৬৩ সালে জন্মগ্রহণকারী কামরুজ্জামান মহুরী মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও মুক্তিযোদ্ধার চূড়ান্ত তালিকায় নাম অন্তর্ভূক্তির চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ইতোমধ্যেই তিনি যাচাই-বাছাই কমিটিকে ম্যানেজ করে প্রাথমিকভাবে তার নাম তালিকাভূক্তি করিয়েছেন। তার নাম তালিকাভুক্ত হওয়ায় সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, সম্প্রতি মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রনালয় দুই মাসের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি সঠিক তালিকা প্রকাশের ঘোষণা দেন। ওই ঘোষাণার পর ভায়াট গ্রামের আলহাজ¦ মেনহাজ উদ্দিনের পুত্র মো. কামরুজ্জামান মিয়া ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র বানিয়ে যাচাই-বাছাই কমিটিকে ম্যানেজ করে প্রাথমিকভাবে তার নাম তালিকাভুক্ত করিয়েছেন। এ ঘটনার পর থেকে এলাকায় ব্যাপক সমালোচনা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কামরুজ্জামান মিয়া কখনও মুক্তিযোদ্ধা হতে পারেন না। আর যদি তিনি মুক্তিযোদ্ধা হন তাহলে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের গায়ে কলঙ্ক লাগবে। তিনি আরো বলেন, ১৯৭১ সালে কামরুজ্জামান ছিলেন শিশু। তার বয়স ছিল ৭/৮ বছর। যাচাই-বাছাই কমিটির মন্তব্যে কামরুজ্জামানের পাশে লেখা হয়েছে তিনি মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করেছেন। অথচ, তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ বা কোন সহযোগিতা করেছেন এমন কথা কোনদিন শুনতেও পাইনি। তিনি উল্টো প্রশ্ন রেখে বলেন- ৭/৮ বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে কি সহযোগিতা করা যায়?
তিনি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে অনতিবিলম্বে যেন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা কামরুজ্জামান মহুরীর নাম সঠিক মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়।তথ্য অনুসন্ধানে দেখা যায়, জাতীয় পরিচয়পত্রে মো. কামরুজ্জামান মিয়া, পিতা- মৃত. আলহাজ¦ মেনহাজ উদ্দিন, মাতা- মৃত. মোছা. মহিরন নেছা, পেশা- ব্যবসা, জন্ম তারিখ- ০৩-০১-১৯৬৩ইং, ক্রমিক নং- ১৬১, জাতীয় পরিচয়পত্র নং- ১৯৬৩৮৮১৮৯৮৪০৫৫৩৪০, ফরম নং-১০৫৫৩৪০, শিক্ষাগত যোগ্যতা- উচ্চ মাধ্যমিক পাস, ভোটার এরিয়া ও কোড- তাড়াশ উত্তর পাড়া, ০৯৬৬, ভোটার নং-৮৮০৯৬৬০৫৫৩৪০, গ্রাম-তাড়াশ, ডাক ও উপজেলা- তাড়াশ, জেলা- সিরাজগঞ্জ। সে হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বয়স ছিল সাড়ে ৮বছর। জামুকা প্রেরিত তালিকায় ক্রমিক নং-১২, তিনি বিএলএফ মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্তির আবেদন করেছেন। কিন্তু তিনি তার বয়স বাড়ানোর জন্য ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র বানিয়ে জন্ম তারিখ-১৩-২-১৯৫২ইং উলে¬খ করে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই তালিকায় আবেদন করেছেন। যাতে তার গ্রাম- ভায়াট, তাড়াশ- সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে নওগা ইউনিয়নের মাটিয়া মালিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মো. কামরুজ্জামান ১৯৭৭সালে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে অকৃতকার্য হয়ে আর পড়াশোনা করেননি। এছাড়া, ভোটার তালিকায় তার বড় ভাই মো. আব্দুল ওয়াহাবের জন্ম তারিখ- ৩০-১১-১৯৫২ইং, ভোটার নং-৮৮০৯৬৩০৫১৩৮২ ও মো. আব্দুর রাজ্জাকের জন্ম তারিখ- ০১-০১-১৯৬২, ভোটার নং ৯৬৩০৫২৪৬৪ উল্লেখ রয়েছে। তার বড় ভাই আব্দুর রাজ্জাকের জন্ম তারিখ-১-১-১৯৬২ইং হলেও তিনি মাটিয়া মালিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় হতে ৮ম শ্রেনীর সনদে ০১.০১.১৯৭৭ইং সাল ভুয়া জন্ম তারিখ উল্লেখ করে ভায়াট শাহ্ কুদরত দাখিল মাদ্রাসায় নৈশ প্রহরীর চাকুরী করে সরকারী বেতন-ভাতা ভোগ করছেন।এ ব্যাপারে, কামরুজ্জামান মিয়ার মহুরীর সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল বশতঃ জন্ম তারিখ ১৩-২-১৯৫২ এর স্থলে ৩-১-১৯৬৩ উল্লে¬খ করা হয়। যা পরবর্তীতে আবেদন করে সংশোধন করা হয়েছে। এখানে কোন জাল জালিয়াতির আশ্রয় নেয়া হয়নি। এক শ্রেণির প্রতিহিংসা পরায়ন লোকজন বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাচন অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জাতীয় পরিচয় পত্রে কামরুজ্জামান মিয়ার জন্ম তারিখ- ৩-১-১৯৬৩ উল্লেখ আছে। জন্ম তারিখ সংশোধন করা হয়নি। এ বিষয়ে তাড়াশ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার গাজী আর্শেদুল ইসলাম বলেন, আমরা তার ভোটার আইডি কার্ড দেখে তাকে মুক্তিযোদ্ধা বানাইনি। আমরা তার জন্ম নিবন্ধন দেখে তাকে মুক্তিযুদ্ধে অন্তভুক্ত করেছি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
(এমএস/এএস/এপ্রিল ১৭, ২০১৭)